Pages

  • কন্ট্রোল প্যানেল
  • সম্পাদক
  • প্রকল্প
  • শিক্ষা
  • ব্যক্তিত্ব
  • ইনকাম
  • ফটো গ্যালারি
  • মতবাদ
  • মোবাইল
  • ধর্মীয়


    নাস্তিকদের আবার কিসের ধর্মনিরপেক্ষতা?

    ইসলামকে বাদ দিয়ে জগতের বুকে 
    কোনো ধর্মনিরপেক্ষতা থাকতে পারে না।





    বাঙ্গালীর একুশে মতামত: নাস্তিকদের আবার কিসের ধর্মনিরপেক্ষতা? ইসলামকে বাদ দিয়ে জগতের বুকে কোনো ধর্মনিরপেক্ষতা থাকতে পারে না। ধর্মনিরপেক্ষতা কি কয়েকজন নাস্তিকের মনগড়া মতবাদ? যদি তাই হয় তাহলে সেই ধর্মনিরেপক্ষতা কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়ের জন্যই তা মঙ্গলজনক হতে পারে না। প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার সন্ধান পেতে হলে আমাদেরকে সব খুঁজা খুঁজির শেষে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর ইসলামের কাছেই যেতে হবে, যেখানে শ্বাশত ধর্মনিরপেক্ষতার বিধান নিশ্চিত করা হয়েছে মহান স্রষ্টার সুষ্পষ্ট নির্দেশে। যারা ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে ধর্মহীনতাকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন তারা হল নাস্তিক। নাস্তিকরাতো কোনো ধর্মকেই স্বীকার করেনা, স্রষ্টার জগতে বসবাস করে স্রষ্টার অস্তিত্বকেই অস্বীকার করছে। ধর্মের ভাল-মন্দ বিচার করার যোগ্যতাইতো তাদের নেই। তাদের বানানো ধর্মনিরপেক্ষতা কি কোনো ধর্মের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে? ধর্মনিরপেক্ষতা হল সকল ধর্মের প্রতি সম্মাণ প্রর্দশন। যার স্বভাবে, চরিত্রে এবং কর্মে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর চরিত্র ও আদর্শ রয়েছে শুধুমাত্র তার মাধ্যমেই ধর্মনিরপেক্ষতা বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব। ইসলাম সাম্প্রদায়িক নয় বরং ধর্মনিরপেক্ষতা ইসলামের একটি সুমহান আদর্শ এবং মুসলমানগণ আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা, নামাজে হুজুরী, আশেকে রাসূল হওয়ার মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।  
    এক মুসলমান ভাইয়ের প্রতি আরেক মুসলমান ভাইয়ের এত হিংসা এবং ঘৃণা কেন?










    আশুগঞ্জে ঈদ-এ মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুছ র‌্যালীকে কেন্দ্র করে - ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারির সহিংস ঘটনা উপলক্ষ্যে দেওয়া অত্র এলাকার বিভিন্ন ধর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও স্থানীয় ওলামায়ে কেরামগণের মতামতের অন-লাইন সংস্করণ সংযোজন করা হল। যার অংশবিশেষ বাঙ্গালীর একুশে’র ফেব্রুয়ারি-২০১৫ সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছিল। 

    বাঙ্গালীর একুশে প্রতিবেদন: ইসলামের শাব্দিক অর্থ শান্তি যার পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে চিরকালের মহামানব হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর জীবনে। যে ইসলামের বৈশিষ্ট্য বিধর্মীকৈ মুগ্ধ করেছিল, যে ইসলাম থেকে উদ্ভূত সভ্যতা বিশ্বকে মহত্বে চমৎকৃত করেছিল, যে ইসলাম মানুষের মাঝে বিশ্বাস ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করেছিল সে ইসলাম থেকে আজ মুসলমানেরা কীভাবে বিচ্যুত হয়ে হিংসা, ঘৃণা ও কলহে লিপ্ত হল তারই একটি নমুনা দেখা গেল গত ১২ই রবিউল আউয়াল ১৪৩৬হিজরী, ২১ পৌষ ১৪২১ বঙ্গাব্দ এবং ৪ জানুয়ারি ২০১৫ সনের রোজ রবিবারে। ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে বন্দর নগরী আশুগঞ্জে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর উদ্যোগে আয়োজিত জশনে  জুলুশ নামক আনন্দ র‌্যালীতে আক্রমণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষ চলে । এতে আহত হয় তিন শতাধিক মানুষ এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। যে পরিস্থিতির সূচনা হয়েছিল তাতে অনেক প্রাণ হানির ঘটনাও ঘটে যেতে পারত। কিন্তু কথা হল কেন এই বর্বরোচিত আক্রমণ? কার বা কাদের স্বার্থে এই আক্রমণ? এর জন্য কে বা কারা দায়ী? নাকি কোনো মহৎ উদ্দেশ্য আছে এর পেছনে?
    ব্যক্তি মুসলমানের চরিত্র অত্যন্ত পবিত্র, সুন্দর ও অন্যের প্রতি কল্যাণকর হওয়ার কথা এবং সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে মুসলমানদের উত্তম জীবনাচারণ ও মহত্ত্ব অন্যের জন্য অনুকরনীয় হওয়ার কথা। কিন্তু ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সঃ) পালনকে কেন্দ্র করে আমরা  আশুগঞ্জে কি দেখতে পেলাম! আমরা দেখেছি ইসলাম আজ হামলা চালিয়েছে ইসলামের উপর। এক মুসলমান ভাই আজ নির্মমভাবে মারছে তারই আরেক মুসলমান ভাইকে। বাস্তবতায় যা দেখা যাচ্ছে তাদের নাম ও পরিচয়টা মুসলমান হিসেবে হলেও মুসলমানের সেই মুমহান আদর্শ ও মতত্বের স্থনটি দখল করে নিয়েছে হিংসা, ঘৃণা ও কলহ। একদল বলছে তারা নামাছ পড়ে না, রোজা রাখে না, হজ্জ করে না, পীরদের গোলামী আর ঈদ-এ-মিলাদুন্নবীতে হৈ চৈ করে তারা সেজেছে সুন্নী আর আশেকে রাসূল। অপর দল বলছে তারা আল্লাহকে মানে, কোরআন ও হাদিস মানে কিন্তু যে রাসূল (সঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় পেলাম, কোরআন ও হাদিস পেলাম সেই রাসূলকে তারা কদর করে না, রাসূলের যথাযথ মর্যাদা দেয় না। তাদের মধ্যে রাসূলের প্রেম নেই, তারা পীর মোর্শেদ ও অলী-আল্লাহদেরকে মানে না, তাদের বিরুদ্ধে বিরুপ মন্তব্য করে। তারা ইসলামের পথ ভ্রষ্ট দুষ্ট এজিদের অনুসারী তারা ওহাবী। এর মধ্যে আরেক দল হাজির হেয়েছে তারা বলছে এই দুই দলের কারো সাথে আমরা নেই। আমরা নিরপেক্ষ। এক মুসলমান ভাইয়ের প্রতি আরেক মুসলমান ভাইয়ের এই অবিশ্বাস, হিংসা ও ঘৃণার নমুনা দেখে একজন মুসলমান হিসেবে তা আমাদেরকে মর্মাহত করে। তাই “বাঙ্গালীর একুশে’র” পক্ষ থেকে এই সংঘাতময় পরিস্থিতির মূল কারণ সমূহ জানতে আমরা অত্র এলাকার ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ধর্মীয় জ্ঞান সম্পন্ন হুজুরদের কাছ থেকে যে তথ্য ও তত্ত্ব গুলো জানতে পেরেছি তা’ই সরাসরি উপস্থাপন করা হল:
    ঘটনার সংক্ষিপ্ত
    আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর ডাকে চরচারতলা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার সুপার মো: মহিউদ্দিন মোল্লার নেতৃত্বে গত ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি রবিবার পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী উদযাপন উপলক্ষ্যে সকাল ১০টার দিকে চরচারতলা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা ও  আশুগঞ্জ গোলচত্তর এলাকায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে তরিকা পন্থী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা জড় হতে থাকে। প্রতক্ষ দর্শীরা জানায়, সকাল ১১টার দিকে প্রায় ৪ থেকে ৫হাজার মুসলিম জনতা আশুগঞ্জ গোলচত্ত্বর থেকে একটি আনন্দ র‌্যালী রেলগেইট দিয়ে কাচারি রোড হয়ে আশুগঞ্জ পূর্ব বাজার প্রদক্ষিণ করে, পুনরায় চরচারতলা মাদ্রাসার দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ‌র‌্যালীটি চলমান থাকা কালিন যখন সামনের অংশ ষ্টেশান-রোডের শরিয়ত নগরের দিকে প্রবেশ করে তখন র‌্যালীটির পিছনের অংশ পূর্ব বাজারে থাকার সময় র‌্যালিটির উপর ইট ও পাথর দিয়ে আক্রমণ চালানো হয়। আক্রমণ কারিরা আসলে কার নেতৃত্বে আক্রমণ চালায় তা সুষ্পষ্ট করে প্রমাণাদিসহ জানা যায়নি। প্রতক্ষ্যদর্শীদের মতে র‌্যালীটি বাজার প্রদক্ষিণের সময় সেখান থেকে র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারি কিছু সদস্য আশুগঞ্জ পূর্ব বাজার বড় মসজিদ ও জামেয়া ইসলামিয়া ইমদাদুল উলুম (কওমি) মাদ্রাসার সামনে গিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিলে টুপি পাঞ্জাবী পড়া কয়েকজন ছেলে র‌্যালীটির উপর ইটের কনা দিয়ে ঢিল ছুড়লে হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়। পরে সমস্ত বাজারেই সংঘর্ষ চলতে থাকে  এবং এক পর্যায়ে সোহাগপুর এবং চরচারতলা এই দুই গ্রামে ঝগড়াটি ছড়িয়ে পড়ে।
    ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী পালন কারিদে বক্তব্য: র‌্যালীতে অংশ্রগহণকারিদের সাথে আলাপ করে জানা গেল ‘তরিকা পন্থী রাসূল প্রেমিকরা এতে অংশ নেয় যাদের অলী-আল্লাহ ও পীর মোর্শেদের ‍উপর অঘাত ভক্তি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস রয়েছে। যারা মনে করে রাসূলকে ভাল না বেসে আল্লাহকে ডাকলে বা ইবাদত বন্দেগী করলে সেই ডাকা ডাকি বা ইবাদত বন্দেগী কোনো কাজে আসবে না। কারণ রাসূলের মাধ্যমেই আমরা আল্লহর পরিচয় পেয়েছি, মুসলমান হয়েছি, কোরআন ও হাদিস পেয়েছি। এবং পীর মোর্শেদগণ রাসূলেরই ধারক-বাহক এবং দিক নির্দেশক। কাজেই রাসূলের শানে দরুদ ও মিলাদ পড়া উত্তম ইবাদত। মহান আল্লাহতায়ালা রাসূলকে জগৎসূহের জন্য রহমত রূপে প্রেরণ করেছেন। রাসূল সর্বযুগের জন্য। তারা জানান, আল্লাহ তায়ালা যতটুকু রাজ্যের জন্যে প্রভু, ততটুকু রাজ্যের জন্য হযরত রাসূল (সঃ) হলেন রহমত- এ কথা আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোনাণা করেছেন। রাসূল (সঃ) কে ভালবাসার নামই হচ্ছে ঈমান। যে রাসূলের নূরে সমগ্র মাখলুকাত পয়দা, যাঁকে সৃষ্টি না করা হলে জগৎকে সৃষ্টি করা হতো না, সে রাহমাতাল্লিল আলামীনের জন্মদিন কী আমাদের জন্য আনন্দময় হতে পারে না? রাসূল (সঃ) এর প্রেম অর্জন করা ছাড়া কারো মুক্তি হবে না। হযরত রাসূল (সঃ) এর প্রেম যদি আমাদের মাঝে ফিরে আসে তবে আমাদের কোনো দুঃখ কষ্ট থাকবে না বলেও বিশ্বাস করেন তারা। তারা রাসূলকে হায়াতুন্নবী হিসেবে বিশ্বাস করেন। পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ফরমান, “হে রাসূল! আপনাকে আমি সমগ্র মানব জাতির জন্যে সাক্ষ্যদাতা, সতর্ককারী ও সুসংবাদ দাতা হিসেবে প্রেরণ করেছি।” (সূরা আহযাব; আয়াত ৪৫-৪৬) হযরত রাসূল (সঃ) কে যদি আমাদের সাক্ষ্যদাতা হতে হয়, তাহেল আমাদের সব কর্যকলাপ তার (রাসূল(সঃ) সামনেই ঘটতে হবে। তিনি সরাসরি তা দেখতে পেতে হবে। কারো মারফত শুনে বা জেনে সাক্ষী হওয়া যায়না। হযরত রাসূল (সঃ) অবশ্যই আমাদের মাঝে রূহানীতে হাজির আছেন। তাকে দেখার যোগ্য চোখ যাদের আছে তারা ঠিকই দেখতে পান। তারা বলেন, হেফাজতে ইসলামি ও ওহাবীরা মনে করে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন কেবল মাত্র একজন বার্তা বাহক, তিনি আল্লাহর বার্তা বা কোরআন মানুষের কাছে পৌছে দিয়ে তার দায়িত্ব শেষ করেছেন। এখন মানুষ কোরআন অনুসারে জীবন পরিচালনা করবে সুতরাং হযরত রাসূল (সঃ) এর প্রসঙ্গ এখন আর টেনে আনার কোন প্রয়োজন পড়েনা। বার্তা কে এনেছে সেটা দেখা বড় কথা নয়, কি বার্তা এনেছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই ধারণা যারা পোষন করে বা করছে তারা রাসূলের শানে দরূদ ও মিলাদ পাঠ করে না এবং রাসূলের জন্মদিন আনন্দের সাথে পালন করাও দূষণীয় বলে মনে করে। এমনকি কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন অপব্যাখ্যার সাহায্যে এই সিদ্ধান্ত দেয় যে, এই গুলি হারাম ও বেদাত। তারা পীর মোর্শেদ মাজার খানকা এমনকি তরিকায় বিশ্বাসী নয় বরং মাজার গুলোতে তারা বোমা ফাটায়।
    ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী পালন না করার পক্ষের বক্তব্য:
    তারা বলছেন, ‘রাসূলের আগমণ বা জন্মের দিন ক্ষণ নিয়ে সাহাবাদের মাঝে মতান্তর আছে। সাহাবাদের বর্ণনা মতে, কোনো কোনো হাদিসে ৯ রবিউল আউয়াল কোনো কোনো হাদিসে ১২ রবিউল আওয়াল আবার কোনো কোনো হাদিসে ১৫ রবিউল আওয়াল এর উল্লেখ রয়েছে অর্থাৎ জন্মদিন নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু রাসূল যে এই তারিখে ওফাত বা বিদায় নিয়েছেন এই বিষয়ে সাহাবাদের মাঝে কোনো মতান্তর নেই। এই হিসেবে ১২ই রবিউল-আওয়াল কে আমাদের শোকের দিবস হিসেবে উদযাপন করতে হয়। শোকের দিনে কি আনন্দ করা যায়? তাছাড়া নবী রাসূলদের জন্ম ও মৃত্যু দিবসগুলিকে যদি আমরা এত গুরুত্ব দেয় তাহলে এক লাখ বা দুই লাখ ছব্বিশ হাজার নবী রাসূল পৃথিবীতে আগমণ করেছেন এবং পরলোক গমণ করেছেন। এখন আমরা যদি নবী রাসূলদের জন্ম দিবস ও মৃত্যু দিবস সমূহ পালন করি তাহলে বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে সারা বছরই জন্ম আর মৃত্যু দিবস উদযাপন করতে হবে অর্থাৎ দিবস উদযাপন নিয়েই সারা বছর আমাদের ব্যস্ত থাকতে হবে। তাহলে আমরা ধর্মের কাজ করব কখন? ধর্মের কি আর কোনো কাজ নেই ? তারা রাসূলের অন্যান্য নির্দেশগুলো পালন না করে শুধু ঈদ-এ-মিলাদুন্নবীর আনন্দ র‌্যালী করেই দাবি করে তারা আশেকে রাসূল। বিভিন্ন আচার আচরণের বর্ণনা দিয়ে তারা বলেন, এখানে পক্ষ দুইটি; একটি ইসলামের হক পন্থী আর একটি হল বাতেল । হক পন্থীদের সাথে বাতেলের কখনও মিল হেব না। কোনো আপোষ হবে না। রাসূলও মক্কার কাফেরদের সাথে কোনো আপোষ কর নাই।

    ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী সম্পর্কে অত্র এলাকার বিভিন্ন ধর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও স্থানীয় ওলামায়ে কেরামগণের বক্তব্য:

    আলহাজ্জ আব্দুল হক সাহেব (মাঃআঃ)
     সাবেক মোহাদ্দেস, জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নীয়া আলিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম, প্রতিষ্ঠাতা- রহমানিয়া নকশেবন্দীয়া দরবার শরীফ, আলমনগর, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
    বক্তব্য: “…ইহিদিনা ছিরাতাল মোস্তাকিম…. আমিন” সূরা ফাহেতার শেষ অংশ। এই অংশে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে, সরল ও সুজাপথের কথা বলেছেন। মেশকাত শরীফের ১ম অধ্যায়ে আছে, একদিন রাসূল (সঃ) সাহাবাদের সামনে লাঠি দ্বারা জমিনে একটি সলল রেখা টানলেন, অতপরঃ ফরমাইলেন ইহাই আমার সরল সুজা পথ, অতপরঃ তার ডানে এবং বামে ৬টি করে ১২টি রেখা টানলেন আবার প্রত্যেকটার মধ্যে ৬টি করে রেখা টানলেন অতপরঃ ফরমাইলেন ডানে বামের প্রত্যেকটি রাস্তার মাথায় একজন আহ্বানকারি থাকবে যিনি মানুষকে দোযখের দিকে আহ্বান করিবে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে তোমরা বাচিয়া থাক। অপর সংক্ষিপ্ত হাদিসে আছে, বনি ইসরাইল ৭২ভাগে বিভক্ত হইয়াছিল আমার উম্মত ৭৩ভাগে বিভক্ত হইবে। অতএব, একটি মাত্র পথের অনুসারিরাই বেহেস্তী হইবে বাকি সবাই ভ্রান্ত মত এবং পথ জাহান্নামী হইবে। বিজ্ঞ আলেমগণ এবং ইমামগণ মুক্তি প্রাপ্ত পথকেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বলিয়া উল্লেখ্য করিয়াছেন। প্রত্যেক মাজহাব যেমন- হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী ও মালেকী মাজহাবের ইমামগণ দ্বারা ইহা স্বীকৃত। শুধু তাই নয় ইমামে তরিকতের চার তরিকা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতকে সঠিক সরল সুজা পথ বলিয়া চিহ্নিত করেছেন। নবী রাসূল ও আওলিয়া কেরামগণ আল্লাহ পাকের সাথে মিশে যায়, তাদের কোনো মৃত্যু নেই। এর প্রমাণ পর্দা নেওয়ার পর তাদের সম্পত্তির ভাগ বন্টন চলে না, তাদের স্ত্রীদেরকেও কেউ বিবাহ করতে পারে না। তাদের শুধু ট্রান্সফার হয়। জিহাদ করতে হলে ইসলামের খলিফা হতে হবে। ঐশি শক্তির একটি ব্যাপার আছে এখানে।
    হযরত মাওলানা এ.বি.এম ছিদ্দিকুর রাহমান
    অথ্যক্ষ আড়াইসিধা কামিল (এম.এ) মাদ্রাসা, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
    বক্তব্য: “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত” ইসলামি শরিয়ত গৃহীত মতবাদ। এটি একটি মতাদর্শ, এটি কোনো ব্যাক্তির মনগড়া কোনো মতবাদ নয় বা কোনো ব্যক্তির কোনো স্বার্থ আদায়ের কোনো সংগঠন নয়। ইসলামের মূলধারাটাই হল “!আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত” তারাই নাজাত পাওয়ার দল। যেই কারণে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই মতাদর্শে এত আগ্রহী। রাসূল (সঃ) এর আদর্শ ও সাহাবা কেরামের আমল –এটাই হচ্ছে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত” এর মূল আদর্শ। সাহাবা কেরামের মাধ্যমেই এটা চলে আসছে। এটাই ইসলামের মূল ও সঠিক ধারা। এই জন্যেই এটাকে রক্ষা করার জন্য আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর পক্ষ থেকে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে “জশনে জুলুছ” এর আয়োজন করা হয়। জশনে জুলুছ এর অর্থ হচ্ছে আনন্দ উদযাপন। রাসূলের জন্মদিনে খুশি হয়ে এই জশনে জুলুছ করা হয়। পবিত্র কোরআনের সূরা ইউনুছ আয়াত ৫৮ এর মাধ্যমে জশনে জুলুছ স্বীকৃত। জশনে জুলুছ উদযাপন করতে গিয়ে অনেকে ভুল করতে পারে কিন্তু মূল জশনে জুলুছ সেটা স্বীকৃত। এখানে আশুগঞ্জে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে জশনে জুলুছের আনন্দ র‌্যালী করতে গিয়ে হয়ত শিষ্টাচার বহির্ভূত কিছু আচরণ হয়েছে, সাবাই’ত আর সমান না, যার ফলে সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু এটি কাম্য নয়। এখানে কে বা কারা এইরকম পরিস্থিতির জন্য দায়ী তা সুষ্পষ্টভাবে কাউকে কিছু বলা যাচ্ছে না। জশনে জুলুছ এর আনন্দ র‌্যালীকে শান্তিপ্রিয় ভাবে করার জন্য র‌্যালীর শুরুতে সুষ্পষ্টভাবে নির্দেশ ছিল। কাউকে আক্রমণ করা বা কারো বিরুদ্ধে কোনো রকম মন্তব্য থেকে বিরত থাকার নির্দেশ ছিল।”
    মুফতি মো: মোশারফ হোসেন
    মুহতামিম (অধ্যক্ষ)
    জামিয়া ইসলামিয়া মদিনাতুল উলুম (কওমি) মাদ্রাসা
    পশ্চিম সোনারামপুর, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
    বক্তব্য: “ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী এটা সবাইকে মানতে হেব। কিন্তু তারা ঈদ-এ-মিলাদুন্নবীর নামে ইসলাম বিরোধী কিছু কাজ করে যেমন আনন্দ মিছিল করে, গান বাজনা করে এবং মহিলাদের নিয়ে নাছানাছি করে। যেটা আমাদের আশুগঞ্জেও হতে যাচ্ছিল। আর এটা ইসলাম সমর্থন করে না। আমরা সমর্থন করি না। তারা সেই দিন আনন্দ মিছিল করে হক্কানী আলেমদের অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করেছে। তারা আশুগঞ্জ পূর্ব বাজারে এসে শ্লোগান দিয়েছে-‘ হৈ হৈ-রৈ রৈ ওহাবীরা গেল কৈ” তখন হক পন্থী মুসলিম জনতা তাদের উপর চাড়াও হয়েছে। যারা চড়াও করেছে তারা কে বা কারা আমরা তার পরিচয় জানতে পারি নাই। দেশের হক্কানী আলেমদেরকে তারা ওহাবী বলছে, আসলে ওহাবী তারা নয়। ওহাবী হল ভিন্ন একটি সম্প্রদায়, যার সাথে হক্কানী আলেমদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি মনে করি সম্পূর্ণ ভুল বোঝাবুঝি এবং সঠিক ইতিহাস না জানা থাকার কারণেই এটা হচ্ছে। ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী এটা আমাদের সবাইকে মেনে চলতে হবে। এই দিনে আল্লাহর নবী দুনিয়াতে আগমণ করেছেন। কিন্তু ইসলামী শরিয়াত বিরোধী কোনো কর্মকে বা কর্মকান্ডকে ইসলাম সমর্থন করেনা আমরাও করি না।
    হযরত মাওলানা মিজানুর রহমান
    সুপার, খোলাপাড়া উম্মেদআলী শাহ দাখিল মাদ্রাসা
    বক্তব্য: আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সঠিক। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত যে সঠিক পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এর সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। হুজুর পাক (সঃ) বলেন, “ মা আনা আলাইহি  ওয়া আছহাবিহি” বাংলায় অর্থ: আমি এবং আমার সাহাবা যেই মত এবং পথে আছি এটাই সঠিক পথ ইহাকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বলা হয়। নবীজির সুন্নতকে যারা মনে এবং পঙ্খানু পুঙ্খভাবে অনুস্মরণ করে তরাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অর্ন্তভুক্ত। আর ইসলামে এই মত অনুসার মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ একান্ত কাম্য। সুতরাং এক মুসলমান আরেক মুসলমানের  মধ্যে হিংসা থাকা সমচিন নয়। ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী অর্থ হল নবীজির আগমণ উপলক্ষ্যে খুশি। নবীজির আগমন উপলক্ষ্যে যে খুশি উদযাপন কা হয় সেটাই হল ঈদ-এ মিলাদুন্নবী। মিলাদুন্নবী আলোচনার বিষয়। নবীজির জীবনী আলোচনা করলে মোস্তাহাব সোয়াব পাওয়া যাবে আর ছিরাতুন্নবী হল পালনীয় বিষয়। নবীজি কিভাবে চলে গেছেন অর্থাৎ নবীজির জীবনে সম্পাদিত সার্বিক আচার আচরণ মানব জাতির জন্য সমস্ত আদর্শের শ্রেষ্ঠ আদর্শ। আল্লাহ তায়ালা ফরমান-“ইন্নাকা আলা হুলুকিন আজিম” বাংলায় অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আমাকে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ দিয়ে পাঠিয়েছে। মিলাদুন্নবী এবং ছিরাতুন্নবীকে অবশ্যই মানতে হবে এবং মুসলমান হিসেবে তা আমাদের অবশ্যই পালন করতে হবে।
    হযরত মাওলানা আব্দুর রউফ
    সুপার-নাওঘাট আব্দুর রউফ ভুঁইয়া দাখিল মাদ্রাসা, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
    বক্তব্য: “বনি ইসরাঈল এর মধ্যে হযরত মূসা (আঃ) এর উম্মতগণ তারা ৭২ দলে বিভক্ত ছিল। আমাদের রাসূল (সঃ) বলেছেন, আমার উম্মতদের মধ্যে দল হবে ৭৩টি। এখানে দল একটা বেশি হবে। এর মধ্যে এক দল সরাসরি জান্নাতে যাবে। আর বাকিদলগুলো বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিভোগ করে জান্নাতে যাবে। এখন যারা সরাসরি জান্নাতে যাবে তাদের সম্পর্কে রাসূল বলেন, আমি এবং আমার সাহাবাদের সরাসরি অনুস্মরণ করেছে যারা, সরাসরি জান্নাতে যাবে তারা। আর অনুস্মরণের মধ্যে যারা আংশিকভাবে অনুস্মরণ করেছে তারা বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে জান্নাতে যাবে। আসলে মুসলমানদের দল হওয়ার কথা একটা কিন্তু এখানে দল অনেক। একদল আদর্শের অনুস্মরণ না করেই বলছে আমরা সুন্নি। যারা নিজেদের সুন্নি দাবি করে তাদের মধ্যে কি সুন্নত আছে? সুন্নত অর্থ আচার, আচরণ, চাল- চলন, রীতি- নীতি ইত্যাদি। যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত দাবি করে তাদের মধ্যে ‘ত সেইরকম সুন্নত দেখা যায় না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর সাংগঠনিক কাঠামো আছ। তারা বিভিন্ন সময় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। ১২ই রবিউল আওয়াল একদিকে আনন্দের দিন আবার আরেকদিকে বেদনার দিন। জশনে জুলুছের নামে আমরা শুধু আনন্দটা করছি, বেদনাটা বাদ দিয়ে দিচ্ছি। আমার দৃষ্টিতে বেদনাটা বেশি থাকতে হবে। শুধু মিছিল করলেই রাসূলের আশেক হওয়া যাবে না। রাসূলের আদর্শটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
    হযরত মাওলানা মো: মহিউদ্দিন মোল্লা
    সুপার-চরচারতলা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
    বক্তব্য: “পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সঃ) ‍উপলক্ষ্য আমরা আশুগঞ্জ বন্দরে সরকার অনুমোদিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর জশনে জুলুছ র‌্যালী শান্তিপ্রিয়ভাবে বাস্তবায়ন করতে গেলে পিছন দিক থেকে হেফাজতে ইসলামের শিক্ষক ও ছাত্ররা আমাদের উপর বর্বরোচিত আক্রমণ চালায়। এতে প্রায় ৩০০ ধর্মপ্রাণ মুসলমান আহত হয়। এই ঘটনা আয়েমে জাহেলীয়াতের যুগকেও হার মানিয়েছে। পথ ভ্রষ্ট ইয়াজিদের উত্তর সূরীরা বাংলাদেশের মধ্যে ওহাবী ও মওদুদীবাদ কায়েম করতে চায়। তারাই ইসলামী জঙ্গী। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তারা আল্লাহর ওলীদের মাজারে বোমা ফাটায়। তারা জর্জকোর্টে বোমা ফাটায়। তারা বাংলাদেশকে একটি জঙ্গীবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। তাদের চিহ্নিত করে দমন করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। এখনই যদি তাদের শক্তহাতে দমন না করা হয়, তাহলে তা আমাদের এই স্বাধীন দেশ ও জাতির জন্য ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে।
    মুফতি ওবায়দুল্লাহ
    মুহতামিম (অধ্যক্ষ), জামেয়া ইসলামিয়া ইমদাদুল উলুম (কওমি মাদ্রাসা) আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
    বক্তব্য: “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত – অর্থ অনুসারে রাসূলের রীতি-নীতি ও আদর্শ অনুস্মরনকারিকেই বোঝায়। এখন রাসূলের সুন্নত পালন না করেই কি আহল সুন্নাতওয়াল জামাত দাবি করা যায়? আসলে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন ফেরকা সৃষ্টি করা হয়েছে। বিধর্মীরা বিভিন্ন ভাবে আমাদের মধ্যে এই ফেরকা সৃষ্টি করে আমাদের  ঐক্যকে বিনষ্ট করে দিয়েছে যাতে আমাদের মধ্যে জামায়াত বা ঐক্য না থাকে। আসলে মূল বিষয়টি খতিয়ে দেখলে দেখা যায় এই ফেরকা সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে মুসলমানদেরকে বিভক্ত করার লক্ষ্যে। বিভিন্ন সময় কিছু আলেমদের দ্বারাই এই কাজটি করানো হয়েছে। ইসলামের একটি মূল শিক্ষা ভ্রাতৃত্ববোধ । আমাদের রাসূল (সঃ) মুসলমানদেরকে ভ্রাতৃত্ববোধে অটল থাকার নিদের্শ দিয়েছেন। আজ মুসলমানেরা বিভিন্নভাবে ভ্রাতৃত্ববোধের পরিবর্তে পরস্পরকে শুত্রু হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে।  এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা রাসূলের জন্মদিন পালন করব টিক আছে কন্তু জন্মদিন পালন যদি করিও তা ইসলামি শরীয়তের ভিতরে থেকেই করতে হবে। এখন  আমরা জন্মদিন পালন করতে গিয়ে যদি ৭-৮টা ট্রাক্ট নামিয়ে তাতে ৪-৫টা স্পিকার লাগিয়ে রাস্তায় নামি আর বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে ড্যান্স দিতে থাকি আর শ্লোগানের মাধ্যমে হিংসা ও বিদ্ধেষ প্রকাশ করি, তাহল সেটা কি ইসলামি শরিয়াত সম্মত হবে বা রাসূলের নিদের্শিত ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচয় বহন করবে ? যেহেতু এই দিনটি আমাদের সরকারি ছুটির দিন, সেই হিসেবে এই দিনটিতে আমরা রাসূলের আদর্শে আদর্শিত হওয়ার অনুপ্রেরণা নিত পারি। আর ধর্মীয়ভাবে আমরা ঈদ-পেয়েছি দুইটি। একটি হল ঈদ-উল-ফিতর আরেকটি হল ঈদ-উল আযহা। তৃতীয় কোনো ঈদের নির্দেশ আমরা পাই নাই। কেউ যদি রাসূলের জন্মদিন পালন করে তাতে আমাদের হিংসা প্রকাশ করার কোনো অবকাশ নেই। আমরাও রাসূলের আদর্শকেই অনুস্মরণ করছি। গত ৪জানুয়ারিতে আশুগঞ্জে যে সহিংস ঘটনা ঘঠেছে তা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য আমরাও দুঃখিত।
    শেখ হাবিব উল্লাহ
    খাদেম, খানকায়ে দারুন্নাজাত, ক্ষুদ্র বি.বাড়িয়া।
    বক্তব্য: “গত ১২ই রবিউল আউয়াল ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে বন্দর নগরী আশুগঞ্জে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর উদ্যোগে আয়োজিত আনন্দ র‌্যালীতে যে মর্মান্তিক হামলার ঘটনা ঘটেছে এটা’ত হওয়ার কথা না। এটা কেন হল। যে নবীর শুভ আগমণে সমগ্র বিশ্বধরা শান্তির পরশ পেল, আমরা ইসলামের সুমহান আদর্শ পেলাম, মহান সৃষ্টিকর্তার পরিচয় পেলাম সেই দায়াল নবীর আগমণ দিবসে যদি আমরা নবীর উম্মত হয়ে থাকি তাহলে সেই দিবসে আমরা মন খুলে মহান রাব্বুল আল-আমিনের দরবারে খুশি হয়ে শুকরিয়া আদায় করে আনন্দ করব এটাই’ত স্বাভাবিক। অনেকে বলে ঈদে মিলাদুন্নবীতে এত আনন্দ করা ঠিক না। আমি কলতে চাই, যদি ঈদ-এ দিলাদুন্নবীতে আনন্দ করা সঠিক না হয়ে থাকে তাহলে পৃথিবীর কোনো আনন্দই সঠিক না। কওমি মাদ্রাসার তারা বলে ঈদে মিলাদুন্নবী বেদাত। তারা বলে আমরা নাকি হযরত রাসূল (সঃ) কে নিয়ে অতিরঞ্জিত করি, রাসূলকে মর্যাদার আসনে বসিয়ে দেয় । আমি বলতে চাই, যে রাসূলকে আল্লাহতায়ালা নিজেই মর্যাদা দিয়েছেন এবং রাসূরে উপর দরুদ পড়েন ফেরেশতাদের নিয়ে সেই রাসূলকে আমি আর আপনি ছোট করার কে? বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের আকুল প্রার্থনা থাকবে সরকার যেন ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন।
    ডাঃ আব্দুল মোতালিব
    ইসলামি চিন্তাবিদ ও গভেষক, টানা তিন চিল্লাদারী তবলিগ জামাতের নেতা:
    মতামত: “বিধর্মীরা ইসলামের ক্ষতি করবে না। ইসলামের ক্ষতি করবে মুসলমানরাই। মুসলমানরাই মুসলমানের ক্ষতি করবে। আসল জিনিস ছাড়াই একটা ফেরকা লইয়া লাগব। তারপর মারামারি শুরু করব। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর জশনে জুলুছ তাদের মনগড়া। দুইটি জিনিসের উপরই ইসলাম। এক হল কোরআন আর দুই হল নবীর তরিকা। এই দুইটি বাদ দিয়ে কোনো ইসলাম নেই। এই দুইটা ছাড়া যেটা আছে সেটা হল বাটপারী। যে দুই দল এইসব নিয়ে মারামারি করতেছে সঠিক না একটাও। তবে একটার মধ্যে সঠিক থিওরী আছে কিন্তু প্রয়োগ নাই। আল্লাহর কালাম ও নবীর তরিকা কওমীর তারা এটা পুরাই মানে তবে তারা সুন্নীদেরকে ঘৃণা করে। আর সুন্নীরা কিছু মানে যেটা তাদের সুবিধা। আল্লাহর দিন আল্লাহই রক্ষা করব। কিভাবে করব, কারে দিয়া করব, এটা আল্লাহই ভাল জানে। সব বেজালের কেরামতি আল্লাহর হাতে। আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কিছুই না। যে আল্লাহ “কোন” বললেই হয়ে যায় সেই আল্লাহর হাতেই সবকিছু। মানুষের মৃত্যুর পর তার পর্ব শেষ সে যত বড় অলী-আল্লাহই হোক না কেন তার আর কিছুই করার ক্ষমতা থাকে না। তার চ্যাপ্টার সমাপ্ত, দুনিয়াতে সে আর কিছুই করতে পারবে না। কোনো অলী-আল্লাহর মাজারে গিয়ে কোনো কিছু চাওয়া ইসলামি শরিয়াত সমর্থন করে না। কারণ তার আর কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। তবে এখানেও একটা ফেরকা আছে। আল্লাহই পেছ লাগা। বান্দারে আল্লাহই পেছ লাগা। কারণ তার সংস্থা বেকার সে করবে না। সব মানুষ খোদা ফরেজগার হয়ে গেলে ফেরেশতারা’ত বেকার হয়ে যাবে। কন্তু বেকার সে করবে না। ছোট্ট একটি কর্মে খুশি হয়ে আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করে দেবে। আল্লাহ খুশি হয়ে গেলে এখানে’ত কারো কিছু করার নেই।
    মুন্সি কবির আহম্মেদ
    খাদেম- তরিকা এ বজলূ শাহ (রাহঃ) দূর্গাপুর।
    মতামত: “আশুগঞ্জে যে ঘটনাটা মিলাদুন্নবী (সঃ) কে কেন্দ্র করে ঘটল এটাকে আমরা নিন্দা জানাই। এটি প্রথমত রাষ্ট্রীয় নীতিমালার উপর আঘাত, দ্বিতীয়ত ধর্ম নিরেপক্ষতার উপর আঘাত। ইসলাম যে শান্তির এখানে ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। ঈদ-এ মিলাদুন্নবী হল রাসূলের আগমন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান। আমরা যেটা বিশ্বাস করি সেটা হল রাসূল (সঃ) না হল কুল কিয়ানাতের কিছুই ঘটত না। রাসূল (সঃ)ই ইসলামের মূল স্তম্ভ। রাসূলের আগমন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সহিংসতা এটি ইসলামের মূল স্তম্ভের উপর আঘাত। আমরা উভয় পক্ষকে বলব সংযত আচরণ করার জন্য। আশুগঞ্জের এই ঘটনাটির মাধ্যমে তারা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে সমস্যার মাধ্যে ফেলে দিয়েছে। এখন আশুগঞ্জে কোনো  একটি ওয়াজ মাহফিল করতে গেলেও ইউ.এন.ও সাহেবের অনুমোদন লাগে শুধু এই ঘটনাটার জন্য। ইসলামও সারা পৃথিবীর জন্য এবং রাসূলও সারা পৃথিবীর জন্য। ৪জানুয়ারিতে যে অবস্থাটা আমরা আশগঞ্জে দেখলাম তাতে প্রমাণ হয়েছে আমরা নামে মুসলমান, কামে’ত আমরা মুসলমানের মধ্যে নাই। পৃথিবী থেকে যদি রাসূল বিদায় নেয় তাহলে পৃথিবীর অস্তিত্বই থাকে না। এটা যারা মনে না করে, তাদের ঈমানের দূর্বলতা আছে। আমরা ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সমর্থন করি, তবে সহিংসতা নয়। কোনো একটি মহৎ কাজ করতে গিয়ে কেউ আমাকে আঘাত করলেই যে পাল্টা আঘাত করতে হবে ব্যাপারটি এমন’ত না।
    আশেকে রাসূল আবুল খায়ের
    ইসলামি চিন্তাবিদ ও সেবক- দেওয়ানবাগ শরীফ।
    এখানে যা পরিলক্ষিত হয়েছে তা হল যে যার বেডাগিরীতেই আমরা ব্যস্ত। আল্লাহতে আত্মসমর্পণের যে ইসলাম ও মুসলমান সেই ধর্মের কোনো নিদর্শন নেই। আল্লাহতে আত্মসমর্পণের কাজটি এত সহজ নয়, এটি কঠিন সাধনার কাজ, এতে শুধু মুসলমান কেন, মানুষের প্রতি হিংসা ও ঘৃণা প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। মানুষকে ভালবেসেই তাদেরকে আল্লাহতে আত্মসমর্পণের শিক্ষায় নিয়োজিত থেকে আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধির কাজটি পালন করতে হয়। আর জেহাদের যে ব্যাপারটি আসে আল্লাহ ও রাসূলের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সেই জিহাদটি’ত আর ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাইয়ের হতে পারে না। কারণ নিজেদের হিংসা ও ঘৃণা প্রতিষ্ঠার জন্য এক মুসলমান ভাই আরেক মুসলমান ভাইকে মারার নাম’ত আর জিহাদ নয়। আর আল্লাহতে আত্মসমর্পণের পূর্বে জিহাদ করার বা জিহাদের ঘোষণা দেওয়ার কোনো যোগ্যতা তো থাকতে পারে না।
    আমরা যতটুকু জানি বা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি তাই যে সঠিক এবং একমাত্র সত্য তা মনে করা কি যুক্তিক ? মানুষের পক্ষে সবকিছু জানা কি সম্ভব ? মহাজ্ঞানীগণ যা জানেন আমরা তা জানি না বা আমাদের পক্ষে তা জানা সম্ভবও নয়। তাই শুধু নিজেদের ধারণাকে বা গবেষণা ছাড়াই বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন কিছু শুনে যে জ্ঞানটুকু অর্জন হয়েছে তাকেই একমাত্র সত্যি মনে করে মুসলমান বা শান্তির ধারক বাহক হিসেবে পরস্পরকে হিংসা করা বা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়া, অবশ্যই কাম্য নয়। বর্তমানে ইসলাম সমগ্র মানব জাতির মুক্তি ও কল্যাণার্থে একটি অবশ্যম্ভাবী জাগরণমুখী শক্তি হিসেবে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জ্ঞানের পরিধি ক্রমাগত প্রসারিত হবার ফলে বর্তমান কালের বিভিন্ন বিষয় বস্তুর উপর সঠিক সমাধানর জন্য সূফী সাধক, গবেষক ও আধ্যাত্মিক জগতের বিশেষজ্ঞদের সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রচলিত অর্থে ইসলাম শুধু মাত্র ধর্মই নয় , ইহা একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। একটি অনন্য জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম বিশ্বকে উপহার দিয়েছে একটি দর্শন, একটি সংস্কৃতি, একটি সভ্যতা, একটি প্রশাসনিক কাঠামো ও নৈতিক মানদন্ড, তৌহিদ ভিত্তিক বৈচিত্রময় ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি উম্মাহ এবং সর্বোপরি, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধনা উজ্জল আল্লাহ প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন অসংখ্য মহৎ ব্যক্তিত্বের।
    যুগ পরিবর্তনশীল, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি এবং বিকাশের ফলে মানুষের জীবন যাপন পদ্ধতিরও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং হচ্ছে। যুগের প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে এখন যারা ইসলাম ও ধর্ম নিয়ে গবেষণা করছেন তারা অধিক সুক্ষ্মাতি সুক্ষভাবে বিশ্লেষণ করে ইসলামের মূল আদর্শকে অনুসন্ধান করছেন এবং এর নিরিখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং পালন করছেন। ফলে আমাদের বিরাজমান অনেক কুসংস্কার ও ভুল ধারনার পরিবর্তন হয়েছে। পুরাতন অনেক ধ্যান ধারণাকে আমরা বাদ দিয়েছি যেমন; ছবি তুলা হারাম, টেলিভিশন দেখা হারাম, আল্লাহ নিরাকার, রাসূল গরিব ছিলেন, সত্তোর তালি জামা পড়তেন, খিদা মিটানোর জন্য পেটে পাথর বেধেঁ রাখতেন। আমরা সবাই বলি রাসূল আল্লাহর বন্ধু, দু’জাহানের বাদশা আবার না বোঝেই বলি রাসূল গরিব ছিলেন, অসহায় ছিলেন, এতিম ছিলেন। আল্লাহ যাকে বন্ধু হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন, তার কি কখনও কোনো সময় গরিব বা অসহায় বা এতিম হওয়ার কোনো সুযোগ আছে? রাসূল আমাদের সত্য পথের একমাত্র নেতা, মুক্তির একমাত্র কান্ডারী এবং মহান সৃষ্টিকর্তার পরিচয় ও দয়া লাভের একমাত্র অবলম্বন, আমাদের মাঝে আমাদে রাসূলের আগমণের দিনটিতে রাসূলের স্মরণে আমরা গর্ব করি, আনন্দ করি।  যারা রাসূলকে এখনও সত্য পথের একমাত্র নেতা ও মুক্তির একমাত্র কান্ডারী হিসেবে ছিনতে পারেন নাই, যাদের কাছে এখনও রাসূল গরিব, সত্তোর তালি জমা পড়া মানুষ, আসলে তাদের ধারণা রাসূলের চায়তেও তারা অনেক ধনি এবং সুখি এবং তারা নিজেরাই নিজেদের মুক্তির জন্য যথেষ্ট। এই কারণে, রাসূলের জন্মদিন পালনকারি আর বিরোধীতাকারিদের মাঝে মিলের একটা ফারাক দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন হল কারা সঠিক ? এখন যারা পবিত্র কোরআন গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় ও মূল আদর্শ সম্পর্কে বলছেন এবং আল্লাহ ও রাসূলের পরিচয় তুলে ধরে রাসূলের জন্মদিন পালনের পরামর্শ দিচ্ছেন তাদেরকে আমরা ভুল বা বেদাত বলতে পারি কি ? তাদেরকে অন্ধভাবে বেদাত বলাটা কতটুকু সঠিক হবে ? 


    No comments:

    Post a Comment