সনাতন
বা বৈদিক ধর্মের অনুসারীরাই বর্তমানে
হিন্দু হিসেবে পরিচিতি
মন্দির বা আশ্রম হল তাদের পবিত্র স্থান বেদ তাদের পবিত্র আদি গ্রন্থ। ধ্যানের
মাধ্যমে বেদ প্রাপ্ত হন বৈদিক ধর্মের অবতারগণ। বেদ গ্রন্থের সারমর্ম হল: “ইশ্বরের
অস্তিত্বেই সকল কিছুর অস্তিত্ব এবং সকল কিছুর মূ্লে স্বয়ং ইশ্বর”। তবে বেদ কোনো একজন
সাধু বা সন্ন্যাসী বা অবতারের লদ্ধকৃত গ্রন্থ নয়।
বেদ হল বহু সাধু সন্ন্যাসী বা অবতারের লদ্ধ কৃত এক মহান শ্রুতিবদ্ধ গ্রন্থ।
তখনকার ইশ্বর আরাধনা হত যজ্ঞ এবং বেদ পাঠের
মাধ্যমে। সকল কাজের আগে যজ্ঞ করা ছিল বাঞ্ছনীয়। সে আমলে কোনো মূর্তি বা মন্দির ছিলনা।
ধারনা করা হয়ে থাকে যে খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ থেকে ১০০০ অব্দের মধ্যে রামায়ণ এবং মহাভারত
শ্রুতিবদ্ধ হয় এবং তখন থেকেই মন্দিরের প্রচলন শুরু হয়।
আশুগঞ্জ
উপজেলার মন্দির সমূহের অবস্থান এবং কার্যক্রম নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন।
বাঙ্গালীর একুশে প্রতিবেদন: সকলেই
স্বীকার করেন যে প্রাগৈতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা থেকে ঐতিহাসিক বৈদিক সভ্যতার প্রাথমিক
পর্ব জুড়ে ছিল হিন্দু ধর্মের সূচনালগ্ন। হিন্দু ধর্ম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীনতম ধর্ম
তবে হিন্দু নামটি আধুনিক কালের দেওয়া। এর প্রাচীন নাম হল সনাতন ধর্ম। আবার এই ধর্ম
বৈদিক ধর্ম নামেও পরিচিত। এই ধর্ম মূলত “বেদ” এর উপর ভিক্তি করে গড়ে উঠেছিল। এই ধর্ম
তত্বের মূল কথা হল ইশ্বরের অস্তিত্বেই সকল কিছুর অস্তিত্ব এবং সকল কিছুর মূ্লে স্বয়ং
ইশ্বর। ইতিহাস বিশ্লেষকদের মতে, আর্য জাতিগোষ্ঠী বেদ চর্চা করত এবং তাদের দ্বারাই সমগ্র
ভারতে তা ছড়িয়ে পড়ে। আর্য জাতিগোষ্ঠীর নেতাগণ
অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলত। তারা চারটি সম্প্রাদায়ে বিভক্ত ছিল। এই সম্প্রদায় গুলো হল:
(১) ব্রাহ্মণ (২) ক্ষত্রিয় (৩) বৈশ্য এবং (৪) শুদ্র। এই সম্প্রদায়গুলো তৈরি করার অন্যতম
কারণ হল কাজ ভাগ করে নেওয়া অর্থাৎ এক এক সম্প্রদায়ের লোকজন এক এক ধরনের কাজ করবে। এই
সনাতন ধর্মের সাধু সন্ন্যাসিরাই বেদ শ্রুতিবদ্ধ বা আয়ত্ত্ব করেন অর্থাৎ ধ্যানের মাধ্যমে বেদ আয়াত্ব
করেন। বেদ কোনো একজন সাধু বা সন্ন্যাসীর লদ্ধ কৃত নয়। বেদ হল বহু সাধু সন্ন্যাসীর লদ্ধ কৃত এক মহান শ্রুতিবদ্ধ
গ্রন্থ। যা প্রথম অবস্থায় সবার মনে মনে ছিল পরে তাকে লিপিবদ্ধ করা হয়। তখনকার যুগের
সমাজ ও জীবন ব্যবস্থায় বেদের আধিপত্য ছিল ব্যাপকভাবে। অর্থাৎ সমাজের সকল কাজ বেদের
মাধ্যমে চলত কারণ বেদে সমাজ চলানো, চিকিৎসা শাস্ত্র, গণনা বিদ্যা সহ এমন সকল উপাদানই
বিদ্যমান আছে। এই কারণে তখনকার সভ্যতাকে বলা
হয় বৈদিক সভ্যতা। ঐ আমলে কোনো মূর্তি পূজা করা হতনা। সেই সময় হিন্দুদের প্রধান দেবতা
ছিল ইন্দ্র, বারুণ, অগ্নি এবং সোম। তারা যজ্ঞের মাধ্যমে পূজিত হত। তখনকার ইশ্বর আরাধনা হত যজ্ঞ এবং বেদ পাঠের মাধ্যমে। সকল
কাজের আগে যজ্ঞ করা ছিল বাঞ্ছনীয়। সে আমলে কোনো মূর্তি বা মন্দির ছিলনা। ধারনা করা
হয়ে থাকে যে, খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ থেকে ১০০০ অব্দের মধ্যে রামায়ণ এবং মহাভারত শ্রুতিবদ্ধ
বা রচিত হয় এবং তখন থেকেই মন্দিরের প্রচলন শুরু হয়। বর্তমানে হিন্দু সম্প্রদাযের প্রধান
আরাদনা বা ধ্যান সাধনার প্রবিত্র স্থান হল মন্দির বা আশ্রম বা দেবস্থান।
আশুগঞ্জ উপজেলার উল্লেখযোগ্য দেবস্থান বা মন্দিরগুলোর
ধারাবাহিক সচিত্র প্রতিবেদনের প্রথম অংশ প্রকাশ করা হল।
আশুগঞ্জ উপজেলা শুধু নয় গোটা বাংলাদেশের প্রাচীনতম মন্দির হল শ্রী শ্রী পাগল
শংকর আশ্রম বা মন্দির। এটি আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের বায়েক গ্রামে অবস্থিত।
শ্রী শ্রী পাগল শংকর আশ্রমটি এখনও আমাদের অত্র উপজেলার হিন্দু ধর্মের পূর্বসূরীদের কৃতিত্ব
এবং স্থাপত্বের স্বাক্ষর বহন করছে। এই আশ্রমটির প্রতিষ্ঠা কাল কেউই সঠিকভাবে বলতে পারেনা
তবে ধারণা করা হয় এটি আজ থেকে আনুমানিক ৫০০
থেকে ১০০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। পাগল শংকর নামে একজন বৈদিক বা হিন্দু ধর্মের
সাধক ছিলেন তিনি বেদে পারদর্শী ছিলেন। তিনি এইখানে বেদ সাধনা করতেন। উনার মৃত্যুর পর
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জায়গাটিকে আশ্রম হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন। বর্তমানে
মন্দিরের প্রধান অংশ পরিত্যাক্ত কালের স্বাক্ষী হয়ে আছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন
পাশের গাছের নিচে তাদের পূজা দিয়ে থাকেন। আশ্রমটি দেখাশুনার দায়িত্বে নিয়োজিত এই এলাকার
বয়স্ক মোরব্বী
শ্রী নরেন্দ্র দাস আশ্রমটি সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বলেন,
“আমি আমার দাদার মুখ থেকে শুনেছি, উনি বলেছেন উনার দাদাও নাকি এই আশ্রমটাকে ছোট বেলা
থেকে এই রকমই দেখে আসছে “। এই আশ্রমটিকে কেন্দ্র করে অনেক দৈব ঘটনা অত্র এলাকার মানুষের
মুখে মুখে এখনও প্রচলিত আছে, যেমন; পাগল শংকরের
কাছে পাতিলে ভরে গরুর মাংস পাঠিয়ে ছিলেন কোনো এক প্রভাবশালী মুসলমান জমিদার। পরে উনি
সবার সামনেই উনার ভক্তদের তা খুলতে বললে খুলার পর দেখা যায় পাতিল ভরা সুম্বাদু মিষ্টি
এবং পরে তিনি তা সবার মাঝে এই মিষ্টি বিলিয়ে দেন। এছাড়া এখনও এখানে নাকি বাৎসরিক যজ্ঞের
সময় অনেক দৈব ঘটনা ঘটে থাকে। এলাকার সবাই বলে এই আশ্রম/ মন্দিরটি অনেক গরম। এটি বায়েক
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন উত্তর পাশে উপস্থিত। এই এলাকার হিন্দু মুসলমান সবাই
এই আশ্রমটির সেবা যত্ন ও মান্য করে থাকে। এই আশ্রমটিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন যাবৎ এখানে কিছু
রেওয়াজ চালু হয়ে আসছে। যেমন; (১) সমাধির মধ্যে জলপানি দিলে কলেরা/ বসন্ত ইত্যাদি বাতাসি
রোগ হবে না (২) দুধ দোয়াইতে গেলে যে গরু লাতি মারে সমাধির গাছের তলের ধূলা মাটি গরুর
গায়ে মেখে দিলে সে গরু শান্ত হয়ে যায় এবং এই ভাবে শান্ত হওয়া গরুর প্রথম দুধ আশ্রমের
একটি প্রথরের স্তম্ভে ঢেলে দিতে হয়, এইভাবে আশেপাশের শত শত মন দুধ এখানে ঢালা হয়।
মাষ্টার সুধন চন্দ্র দাস শ্রী শ্রী অনুকুল চন্দ্র ঠাকুরের
শিক্ষা উল্লেখ করে বলেন, আমি এই কথা বলি এবং বিশ্বাস করি বলেই মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব
এখন আমার হাতে নাই। শ্রী শ্রী অনুকুল চন্দ্র ঠাকুরের শিক্ষা ছিল, যেমন (১) নিজে বাঁচে
অন্যে থাকে ধর্ম বলে জানিস থাকে। (২) বাঁচা বাড়ার মর্ম যা ধর্ম বলে জানিস তা। (৩) মানুষ
আপন টাকা পর যত পারিস মানুষ ধর। (৪) বাস্তবিটা যার যেটা পূর্ব পুরুষের বাস, রাখিস তারে
স্বজতনে যতক্ষণ থাকে শ্বাস। (৫ ) আমি একজন মানুষ আমার কোনো জাত নেই, - এক আদেশে চলে
যারা তাদের নিয়েই সমাজ গড়া।
তালশহর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ সংলগ্ন এবং বুধাইসাহা উচ্চ
বিদ্যালয়ের মাঠের উত্তর পূর্ব কোণে অনেক বছরের
পুরনো মন্দির এটি কালি মন্দির হিসেবেই সবার
কাছে পরিচিত। মন্দিরটির ভগ্নদশার কারণে এর সঠিক সন তারিখ জানা যায়নি। হিন্দু সমাজের
প্রবিন যারা আছেন তারা বলছেন আমরা আমাদের বাবা-দাদাদের কাছ থেকেও শুনে আসছি এটি অনেক
পুরাতন মন্দির। ধারণা করা হয় দুইশত থেকে পাঁচশত বছর আগে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করা
হয়েছিল। বর্তমানে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মন্দিরটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে। আশুগঞ্জ –সরাইলের এম.পি জিয়াউল হক
মৃধা হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্রতম স্থান এই মন্দিরটিকে সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী
করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
৩. শ্রী শ্রী লোকনাথ মন্দির, ভবানীপুর, আড়াইসিধা
মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা কাল ২০০৫ সালে। প্রতিষ্ঠাতা: মৃত ডা: দিন বন্ধু চন্দ্র
পাল। বর্তমানে মন্দিরটির সার্বিক দায়িত্বে আছেন ডা: পরিমল চন্দ্র পাল। মন্দিরটি সম্পর্কে
পরিমল চন্দ্র পাল বলেন, এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার পেছনে অনেক দৈব ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে। এখন
কারো কোনো মান্তি থাকলে মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান করা হয় এবং প্রতিদিন সকাল বিকাল
পূঁজা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতি বছর ২টি বাৎসরিক অনুষ্ঠান করা হয় একটি অনুষ্ঠান করা হয়
১৯ জৈষ্ঠ্য, এই অনুষ্ঠানটি করা হয় লোকনাথ ব্রহ্মচারির পরলোক গমন উপলক্ষ্যে। আর একটি
অনুষ্ঠান করা হয় কার্তিক মাসের ১৫ তারিখ। এই অনুষ্ঠানটি করা হয় লোকনাথের বাতির অনুষ্ঠান।”
পরিমল বলেন, আশুগঞ্জ উপজেলার অনেকেরই আসা যাওয়া আছে এই অনুষ্ঠাগুলোতে।” পরিমল
লোকনাথ
ব্রহ্মচারির কিছু উপদেশ, শিক্ষা ও বাণী উল্লেখ করেন। উপদেশগুলো হল (১) আগে খন্ডকে জানতে
হবে, কারণ খন্ডকে চাইতে না জানলে অখন্ডের মহানন্দ চাওয়ার গৌরব আসবে কোথা থেকে। (২)
এই দেহ পাতের সঙ্গে সঙ্গে সব শেষ হয়ে যাবে মনে করিস না, আমি যেমনটি ছিলাম, যেমন আছি,
তেমনি চিরকাল থাকব। (৩) মুসলমান কথাটা এসেছে ‘মুছল্লমান’ কথা থেকে, এর অর্থ হল ষোল
আনা ধর্ম যার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সেই কেবল মুসলমান, আমাতে ষোল আনা ধর্ম আছে তাই আমাকেও
মুসলমান বলতে পারিস। (৪) সাধনার উচ্চতম শিখরে গিয়ে যখন পরমত্বের পৌঁছলাম, তখন দেখি
আমাতে আার অখিল ব্রাহ্মন্ডের অস্তিত্বে কোনো ভেদ নেই, সব মিলে মিশে একাকার। (৫) অহং
চলে গেলে নিজের মনই নিজের গুরু হয়, সৎ ও অসৎ বিচারে আসে, জ্ঞানের সঙ্গে ভক্তির মণিকাঞ্চন
যোগ হলে শ্রদ্ধা হবে তোদের আশ্রয়, হবে তোদের বান্ধব এবং শ্রদ্ধাই হবে তোদের পাথেয়।(৬)
যা মনে আসে তাই করবি, কিন্তু বিচার করবি। (৭) কাম ক্রোধ সব রিপুই অবচেতন মনের স্তরে
স্তরে সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে সুযোগ পেলেই তারা প্রকাশ হয় কারণ মানুষ তাদের অস্তিত্ব সম্মন্ধে
সচেতন নয়, অচেতন মন রিপুদের আবাধ ক্রীড়াক্ষেত্র। মন যা বলে শোন, কিন্তু আত্ম বিচার
ছেড়ে দিসনা, কারণ মনের মতন প্রতারক আর কেউ নেই।
৪. শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র (আশ্রম) মন্দির, লালপুর
এই মন্দিরটি আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের লালপুর সিএনজি ষ্ট্যান্ডের পশ্চিম
দিকে রাস্তার দক্ষিণে উপস্থিত। এর পাশেই আর একটি মন্দির আছে, সেই মন্দিরটির নাম –দয়াময়
মহর্ষী মনমোহন মন্দির। ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাতা ও জমি দাতা সুভদ্রা
রানী দাস। এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠ হয়েছে ১৪০১ বঙ্গাব্দে। মন্দিরটি সম্পর্কে সুভদ্রা রাণী
দাসের ছেলে মাষ্টার সাধন চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের হিন্দু ধর্ম এখন কুসংস্কারে ভরে গেছে,
যে আদর্শের উপর ধর্ম প্রতিষ্ঠিত সেই আদর্শ ছেড়ে এখন আমরা প্রথার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি।
আমারা হিন্দু ধর্ম পালন করতে গিয়ে অন্য ধর্মের সাথে যে পাহাড় পরিমাণ বৈষম্যের সৃষ্টি
করি এটিই হল কুসংস্কার। প্রকৃতপক্ষে যে কোনো ধর্ম তত্ত্ব অধ্যয়ন করলে এবং ধর্মের সাধকদের
শিক্ষা বিশ্লেষণ করলে মূলে কোনো বৈষম্য খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন যুগের সাথে মিলিয়ে
ধর্ম করাটাই অনেক বড় বিষয়।’
৫. শশ্মান ও শ্রী শ্রী রক্ষা কালিমন্দির, তালশহর
এই মন্দিরটির দায়িত্বে আছেন দূর্গাদাস তলা পাত্র। উনি তালশহর চিতাশাল (শশ্মান)
এর দায়িত্বে আছেন। গোটা উপজেলার হিন্দু শাস্ত্রের তিনি একমাত্র সাধক যাকে সনাতন ধর্মের
আদি গ্রন্থ বেদ এবং রামায়ন ও মহাভার শাস্ত্র অধ্যয়ন করতে দেখা গেছে। শশ্মান ও মন্দির
সম্পর্কে দূর্গা দাস বলেন, এই শশ্মানটির বয়স ৩০০ বছরের উপরে হবে। তালশহরে হিন্দু ব্রাহ্মণদের
বসবাসছিল অনেক বৎসর পূর্বে এবং অনেক দিন যাবৎ। তখনই এই শশ্মানটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
দেশ স্বাধীনের পর এই শশ্মানটি রক্ষা করতে আমাকে জজকোর্ট, হাইকোট পর্যন্ত যাইতে হয়েছে।
পরে কোর্টের রায় আমাদের পক্ষে আসে। এখন এই শশ্মানটির উন্নয়নের জন্য সরকারের সহযোগিতা
আমাদের দরকার।’ তালশহর শশ্মাংকলার সভাপতি দূর্গাদাস আরো বলেন, এক সময় ২০ কানি (৬০০
শতাংশ) জমি ছিল এই শশ্মানের। যখন অত্র এলাকায় কোনো মুসলমানের বাস ছিল না তখন থেকেই
এই শশ্মান। বর্তমানে শশ্মানের অধিকাংশ জায়গাই মুসলমানদের দখলে শশ্মানের অধীনে রয়েছে
মাত্র ৭০ শতাংশ।
শশ্মানটিতে এখনও কোনো বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই বলে জানান তিনি। শ্রী
শ্রী রক্ষা কালি মন্দিরটিতে বাৎসরিক একটি অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের তারিখ: ফল্গুনের
শিতাকূন্ডের মেলার শিব চতুর্থ দশীর পরের দিন। বিভিন্ন জায়গা থেকে হিন্দু ও মুসলমানগণ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ
করেন বলে জানান দূর্গা দাস তলা পাত্র।
পারিবারিক মন্দির ছাড়াও লালপুরে উল্লেখযোগ্য
আরও ৭টি মন্দির রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শশ্মান কালি মন্দির, লোকনাথ মন্দির,
রাম ঠাকুর মন্দির, ভগবতে বাসুদেব মন্দির।
উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে বর্তমানে ৪টি ইউনিয়নে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের
বাস রয়েছে। এই ইউনিয়নগুলো হল (১) লালপুর ইউনিয়ন এই ইউনিয়নে প্রায় ৬হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের
লোকের বসবাস। উল্লেখযোগ্য মোট মন্দিার রয়েছে
১০টি। (২) এর পর রয়েছে তালশহর ইউনিয়ন- এই ইউনিয়নেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন রয়েছে
২হাজারের মত। একসময় অভিজাত ও হিন্দু জমিদারদের বসবাস ছিল এই ইউনিয়নটিতে। এই ইউনিয়নটিতে
উল্লেখযোগ্য মন্দির রয়েছে ২টি। এছাড়াও পারিবারিক বেশ কিছু মন্দিরের মাধ্যমে হিন্দু
সম্প্রদায়ের লোকজন পূজা দিয়ে থাকে। (৩) তারপর আছে আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন- এই ইউনিয়নটিতেও
প্রায় ২হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস রয়েছে। বিশেষ করে চর সোনারামপুর এবং
জগদ্বীশপুর এই দুইটি গ্রামেই হিন্দু সম্প্রায়ের লোকজনের বসবাস। উল্লেখযোগ্য মন্দিরের
সংখ্যা ২টি। (৪) এছাড়া আড়াইসিধা গ্রামের ভবানিপুর গ্রামের পাল বাড়িতে বেশ কিছু হিন্দু
সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস রয়েছে এবং লোকনাথ মন্দির নামে একটি আশ্রম বা মন্দির রয়েছে।
সরেজমিনে জরিপ চালিয়ে আমরা আশুগঞ্জ উপজেলায় মোট ১৫টি মন্দির
পেয়েছি। তবে এর মধ্যে বেশির ভাগ মন্দিরই অযত্নে অবহেলায় রয়েছে, কোনো মন্দিরেই বর্তমানে
কোনো সাধকের সন্ধান আমরা পাইনি। পারিবারিক বা হিন্দু সম্প্রদায়ের যুবকদের উদ্যোগেই
এই মন্দির গুলো পরিচালনা করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ গাতানুগতিক ধারাকে কোনো
রকম আকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা হিসেবে এই মন্দিরগুলোতে বিভিন্ন পূজার সময় অনুষ্ঠান করে
থাকে। কোনো সাধু বা সন্ন্যাসী মন্দিরে না থাকার কারণে বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া ধর্মের ধ্যান
সাধনা এখন আর হচ্ছে না। মন্দিরের অভ্যন্তরে কিছু মূর্তি নিয়ে প্রাণহীন পরিবেসের মধ্যে
সারা বছরই মন্দিরগুলো বন্ধ থাকে। ফলে ধর্মীয় শিক্ষা বা হিন্দু বা সনাতন ধর্মের আদি গ্রন্থ বেদ
এখন আর কেউ গবেষণা করেন না। এর মধ্যে ৫টা মন্দির আছ যে গুলোতে পারিবারিকভাবে সকাল বিকাল
কিছু নিয়ম পালন করতে দেখা যায়। চলবে>
No comments:
Post a Comment