গণতন্ত্র: গাণতান্ত্রিক সমাজ, শাসন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা
গণতন্ত্র কথাটির অর্থ হল জনগণের শাসন। ধারণা করা হয়ে থাকে যে, আনুমানিক ৫০০
খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে এথেন্স ও গ্রীকের অন্যান্য নগর রাষ্ট্রের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে
বোঝাতে এই শব্দটির প্রথম ব্যবহার শুরু হয়। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে বিশ্বের প্রথম
গণতন্ত্র সৃষ্টি হয় গ্রিসের নগর রাষ্ট্র এথেন্সে। এথেন্স রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায়
প্রথম রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বিভিন্ন জাতি ও উপজাতির মধ্য থেকে নেতাদের বেছে নেওয়ার
পদ্ধতি চালু হয়। এবং প্রতিটি মুক্ত নাগরিককে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সরকার পরিচালনায়
সরাসরি অংশ গ্রহণের অধিকার দেওয়া হয়। খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ ৪২২ সালে ক্লিসথেনিস- প্রথম গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন
এইভাবে-“ That shall be the democratic which shall be the people, for the
people.” ক্লিনের ২,২৮৫ বছর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনও প্রায় একই ভাবে
গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করেছেন, ১৯ নভেম্বর ১৮৬৩ সালে। তিনি দাস প্রথাকে কেন্দ্র করে
আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেনসাল ভেনিয়ার গোটিসবার্গে
জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণের শেষ দিকে বলেন, “ ….Shall have a new birth of freedom-
and that the government of the people, by the people, for the people, Shall not
perish from the earth.”
গণতান্ত্রিক মতাবাদের নেতাগণ হলেন:
(১) ক্লিসথেনিস (২) আব্রাহাম লিঙ্কন
গণতান্ত্রিক মতবাদের পক্ষে এবং বিপক্ষের দার্শনিকগণ:
বিপক্ষে: প্লেটো: গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সবচেয়ে অযোগ্য। গণতান্ত্রিক শাসন
ব্যবস্থা কখনও ভাল শাসন ব্যবস্থা হতে পারে না,
ম্যাকিয়াভেলি: ষোড়শ শতাব্দীতে আনুষ্ঠানিক জাতীয় রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। এবং
সেখানে তিনি পরোক্ষ গণতন্ত্রকে অন্তভুর্ক্ত করেন। নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা জনগণের
দ্বারা নির্বাচিত হয়ে জনগণের স্বার্থে প্রতিনিধিত্ব করবেন , এই ধারনা ম্যাকিয়াভেলি
সংযোজন করেন গণতন্ত্রে।
বিপক্ষে: রুশো- অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসি দার্শিনিক রুশো বলেন, জন প্রতিনিধিরা
জন স্বার্থে কাজ না করে নিজ স্বার্থে কাজ করেন।
থিউডোর পার্কার: গণতন্ত্রের পক্ষে থিউডোর পার্কার বলেন,“ চিন্তার স্বাধীনতা
থাকবে, কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, কাজের স্বাধীনতা থাকবে এবং উপ্যাসনার স্বাধীনতা থাকেব
এবং এই গুলো থাকলেই সেটা হবে গণতান্ত্রিক মতাদর্শ।
এড ওয়ার্ড বেলামী: গণতন্ত্রের পক্ষে বলতে গিয়ে এড ওয়ার্ড বেলামী বলেন,‘ ব্যক্তির
মূল্য ও মর্যাদা দানই হলো গণতন্ত্রের প্রথম কথা। মানব প্রকৃতি সাম্যের বিভক্তিতে গঠিত
এবং মানুষের মর্যাদা অত্যন্ত প্রযোজনীয়ভাবে
সকল ব্যক্তির মাঝে সমানভাবে বর্তমান। সুতরাং সম্যই গণতন্ত্রের মূখ্য আদর্শ।
বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্টসমূহ:
বিশ্বের ১১৬টি রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে।
এই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ও নির্বাচনে গণ-সম্পৃক্ততা, সরকারের
অবকাঠামো, বিরাজমান রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক অধিকারের
বাস্তবায়নের বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে ৩টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন (১) পূর্ণাঙ্গ
গণতন্ত্র (২) ত্রূটিপূর্ণ গণতন্ত্র এবং (৩) হাইব্রিড গণতন্ত্র।এই হিসেবে বর্তমান বিশ্বে
পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার রাষ্ট্র রয়েছে ২০টি, ত্রূটিযুক্ত গণতান্ত্রিক
শাসন ব্যবস্থার রাষ্ট্র রয়েছে ৫৯টি এবং হাইব্রিড গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার রাষ্ট্র
রয়েছে ৩৭টি।
বিশ্বের পূর্ণাঙ্গ গণ-তান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার
রাষ্ট্রগুলো হল: (রেংকিং এর ক্রম অনুসারে)
(১) নরওয়ে (২) আইসল্যান্ড (৩) সুইডেন (৪) নিউজিল্যান্ড (৫) ডেনমার্ক (৬) সুইজারল্যান্ড
(৭) কানাডা (৮) ফিনল্যান্ড (৯) অষ্ট্রলিয়া (১০) নেদারল্যান্ড (১১) লুক্সেমবার্গ (১২)
আইয়ারল্যান্ড (১৩) জার্মানি (১৪) অষ্ট্রিয়া (১৫) মাল্টা (১৬) যুক্তরাজ্য (১৭) স্পেন
(১৮) মরিশাস (১৯) উরোগুয়ে (২০) যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্বের ত্রূটিপূর্ণ গণ-তান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার
রাষ্ট্রগুলো হল: (রেংকিং এর ক্রম অনুসারে)
(১) ইতালি (২) দক্ষিণ কোরিয়া (৩) জাপান (৪) কোষ্টারিকা (৫) চেক রিপাবলিক (৬)
বেলজিয়াম (৭) ফ্রান্স (৮) বুটসোয়ানা (৯) ইস্তোনিয়া (১০) চিলি (১১) থাইওয়ান (১২) কেপ-ভারডি
(১৩) পর্তুগাল (১৪) ইসরায়েল (১৫) ইন্ডিয়া (১৬) সলভেনিয়া (১৭) দক্ষিণ আফ্রিকা (১৮) লিথুনিয়া
(১৯) সাইপ্রাস (২০) গ্রীস (২১) জামাইকা (২২) লাটভিয়া (২৩) স্লোভাকিয়া (২৪) তৈইমুর লেষ্ট
(২৫) পানামা (২৬) বুলগেরিয়া (২৭) ত্রিনিদাদ (২৮) পোল্যান্ড (২৯) ইন্দোনেশিয়া (৩০) আর্জেন্টিনা
(৩১) ব্রাজিল (৩২) ক্রোশিয়া (৩৩) ঘানা (৩৪) পিলিপাইন (৩৫) হাঙ্গেরী (৩৬) সুরিনাম (৩৭)
তিউনিশিয়া (৩৮) সরবিয়া (৩৯) রোমানিয়া (৪০) ডোমিনিকান রিপাবলিক (৪১) এল-সালভাদর (৪২)
মংগুলিয়া (৪৩) কলম্বিয়া (৪৪) লেসোথো (৪৫) পেরু (৪৬) মেক্সিকো (৪৭) হংকং (৪৮) মালয়েশিয়া
(৪৯) শ্রিলংকা (৫০) মালদ্বীপ (৫১) পেরাগুয়ে (৫২) নামিবিয়া (৫৩) জাম্বিয়া (৫৪) সিংগাপুর
(৫৫) সেনেগাল (৫৬) গাইয়ানা (৫৭) পাপোয়া নিউ গিনি (৫৮) মেকাডোনিয়া এবং (৫৯) মনটেনেগো।
বিশ্বের হাইব্রিড গণ-তান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার রাষ্ট্রগুলো
হল: (রেংকিং এর ক্রম অনুসারে)
(১) গুয়েথমালা (২) আলবেনিয়া
(৩) জর্জিয়া (৪) ইকুয়েডুর (৫) হোন্ডারাস (৬) বলিভিয়া (৭) বাংলাদেশ (৮) বেনিন (৯) ইউক্রেইন
(১০) মালি (১১) ফিজি (১২) তানজিনিয়া (১৩) মালাই (১৪) কিরিগিস্তান (১৫) কেনিয়া (১৬)
নিকারাগুয়া (১৭) উগান্ডা (১৮) তুর্কী (১৯) থাইল্যান্ড (২০) ভেনিজুয়েলা (২১) লাইব্রেরিয়া
(২২) ভুটান (২৩) লেবানন (২৪) মাডাগাসকর (২৫) বসনিয়া হারজে গবিনা (২৬) নেপাল (২৭) বোরকিনা
ফাসু (২৮) মরুক্কো (২৯) নাইজেরিয়া (৩০) মুজাম্বিক (৩১) পেলেষ্টাইন (৩২) সিরিয়া লিউন
(৩৩) পাকিস্তান (৩৪) কম্বোডিয়া (৩৫) মাইয়ানমার (৩৬) ইরাক এবং (৩৭) আরমেনিয়া।
No comments:
Post a Comment