বাঙ্গালীর একুশে মাতামত পর্ব-১
বাঙ্গালীর একুশে মাতামত পর্ব-১
বর্তমান সরকারকে বলছি-‘ সংবিধানের চার মূলনীতি নিয়ে সামরিকরা অনেক গুজামিল দিয়েছেন
এখন আপনারা কেন দিচ্ছেন ? ‘
জাতীয়তাবাদ> সমাজতন্ত্র> গণতন্ত্র > ধর্মনিরপেক্ষতা
বাংলাদেশের আদি সংবিধানের ৪ (চার) মূল নীতি
স্বাধীনতার ৪৫ বছরে তা বাস্তবায়ন করতে আমরা কতটুকু পেরেছি ?
কেন হচ্ছে বার বার এই মূলনীতিগুলো নিয়ে কাড়া-কাড়ি ?
না-কি আসেলেই মূলনীতিগুলো পরস্পর সাংঘর্ষিক ?
আসুন প্রথমেই দেখি আমাদের মূল গলদটা কোথায়>
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান
[বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
(দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে)/
পরম করুণাময় সৃষ্টি কর্তার নামে।]
প্রস্তাবনা
আমরা বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখ স্বাধীনতা ঘোষণা
করিয়া-[জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সার্বভৌম গণ প্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করিয়াছি। আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যেসকল মহান আদর্শ আমাদের বীর
জনগণকে জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে আত্ম নিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্ভদ্ধ
করিয়াছিল –জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আর্দশ এই সংবিধানের
মূলনীতি হইবে]
[আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ হইবে গণতান্ত্রিক
পদ্ধতিতে এমন এক শোষন মুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা যেখানে সকল নাগরিকের জন্য
আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা
ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।]
[এত দ্বারা আমাদের এই গণ পরিষদে অদ্য তেরশত উনাশী বাঙ্গাব্দের কার্তিক মাসের
আঠারো তারিখ, মোতাবেক উনিশ শত বাহাত্তর খ্রীষ্টাব্দের নভেম্বর মাসের চার তারিখে আমরা
এই সংবিধানের রচনা ও বিধিবদ্ধ করিয়া সমবেতভাবে গ্রহণ করিলাম।]
টিকা: স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের
প্রথম সংবিধান পাস হয় এবং তা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর শুরু
হয়।
প্রথম ভাগ :
প্রজাতন্ত্র- অনুচ্ছেদ-৬ নাগরিকত্ব (বর্তমান সংবিধান)
নাগরিকত্ব: [৬।(১) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত
হইবে। (২) বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত
হইবেন।]
দ্বিতীয় ভাগ
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি (বর্তমান সংবিধান)
অনুচ্ছেদ-৯: জাতীয়তাবাদ:
[৯। ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ
সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন
করিয়াছেন সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।]
প্রথম ভাগ :
প্রজাতন্ত্র- অনুচ্ছেদ-৬ নাগরিকত্ব (আদি সংবিধান-(৭২) অনুযায়ী)
বাংলাদেশের নাগরিকত্বের ব্যাপারে সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ ছিল-“ (বাংলাদেশের
নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে; বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালি বলিয়া
পরিচিত হইবেন।)”
অনুচ্ছেদ-৯: জাতীয়তাবাদ: (আদি সংবিধান-(৭২) অনুযায়ী)
অন্যদিকে সংবিধানের ৯ অনুচ্ছেদে বাঙালি বাতীয়তাবাদ সম্পর্কে বলা হয় –“( ভাষাগত
ও সংস্কৃতিগত একক সত্তা বিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সঙ্কল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া
জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই
বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি)”
জাতীয়তাবদ সম্পর্কে এই হল গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আদি সাংবিধানিক বিধান।
এর পর ১৯৭৭ সালে ১নং সামরিক ফরমান বলে এবং ১৯৭৯ সালে সংবিধানের পঞ্চম (৫) সংশোধনীর
মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত সংবিধনের প্রথম
ভাগের ৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে লেখা হয়-“(বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত
ও নিয়ন্ত্রিত হইবে; বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।)”
আন্যদিকে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ৯ অনুচ্ছেদে লিপিবদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদের
সংজ্ঞা বাদ দিয়ে সেখানে –‘স্থানীয় শাসন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন সংক্রান্ত
বর্ণনা জুড়ে দেয়া হয়।’
অথ্যাৎ এখানে বাঙালী জাতিকে সাংবিধানিক বিধান দ্বারা বাংলাদেশী বানানো হয়েছে।
এরপর বর্তমান সরকারের গত ৫ বছরের মেয়াদ কালে ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ
(১৫) সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত বিষয়টির মিমাংসার জন্য একটি সংস্কার সাধন
করেন। সেই সংশোধনীর প্রথম ভাগের ৬ অনুচ্ছেদের ১ উপানুচ্ছেদের বর্ণনায় বলা হয়- “( বাংলাদেশের
নাগরিকত্ব আইন দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে)” এবং ২ অনুচ্ছেদের বর্ণনায় বলা
হয়-“(বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।)”
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের বর্তমান সংশোধীত এই অনুচ্ছেদের উপঅনুচ্ছেদ
১ বাংলাদেশের আদি সংবিধানের বিধানকে অপরিবর্তিত রাখা হলেও, উপঅনুচ্ছেদ ২ এর বর্ণনায়
জাতি হসেবে –‘বাঙালি’ এবং নাগরিক হিসেবে ‘বাংলাদেশী’- এই সীমা রেখা টেনে সরকার চরম
অপরিপক্ক, অদূরদর্শী এবং ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, তুমি কোন জাতি? অথবা তোমার জাতীয়তা কি ? আমার সুস্পষ্ট
উত্তর হবে আমি –বাঙালি। ঠিক একই ভাবে যদি আমাকে প্রশ্ন করা হয় তোমার দেশ কোনটি অথবা
তুমি কোন দেশের নাগরিক ? আমার সুস্পষ্ট উত্তর হওয়ার কথা- বাংলাদেশ > কিন্তু তা না
বলে সাংবিধানিকভাবে আমাকে বলতে হবে –বাংলাদেশী। তা বলা হস্যকর নয় কি? বাংলাদেশী নামক
কোন রাষ্ট্র বিশ্বের কোথাও আছে না-কি??
তাই আজ জীবন বৃত্তান্ত, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট
সহ সকল ক্ষেত্রে আমাদের জন্ম, ভাষা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধারণ করে আছে যে জাতীয়তার সত্ত্বা সেই বাঙালি জাতীয়তার বাহিরে গিয়ে এক অতি উদ্ভটভাবে জাতীয়তার অপশনে লিখতে হচ্ছে –‘বাংলাদেশী’। ব্যপারটা এমন হয়ে দাড়াচ্ছে যে , গ্রামবাংলার একটি প্রবাদ আছে –“গায় অ’না বলদ অ’না মধ্যেদা ছেনা” অর্থাৎ এটা এমন একটা জন্তু বাস্তবে যা কোনো কাজেরই না। নাগরিকতার প্রশ্নে স্বাভাবিকভাবেই আমাকে আমার দেশের শুদ্ধ এবং নির্ভুল নাম বলতে হবে যেমন ‘বাংলাদেশ’ বা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সংবিধান যেখানে জাতীয়তার বিধান করেছেন বাঙালী সেখানে সেই সংবিধান যদি নাগরিকতার বিধানে ‘বাংলাদেশী’ রাখার বিধান করে তাহলে দেশের নাম বিকৃত করার দোষে সংবিধান দোষী হবে। কারণ আমরা ‘বাংলাদেশী’ নামক কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক নয় আমরা স্বাধীন ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ এর নাগরিক।
সহ সকল ক্ষেত্রে আমাদের জন্ম, ভাষা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধারণ করে আছে যে জাতীয়তার সত্ত্বা সেই বাঙালি জাতীয়তার বাহিরে গিয়ে এক অতি উদ্ভটভাবে জাতীয়তার অপশনে লিখতে হচ্ছে –‘বাংলাদেশী’। ব্যপারটা এমন হয়ে দাড়াচ্ছে যে , গ্রামবাংলার একটি প্রবাদ আছে –“গায় অ’না বলদ অ’না মধ্যেদা ছেনা” অর্থাৎ এটা এমন একটা জন্তু বাস্তবে যা কোনো কাজেরই না। নাগরিকতার প্রশ্নে স্বাভাবিকভাবেই আমাকে আমার দেশের শুদ্ধ এবং নির্ভুল নাম বলতে হবে যেমন ‘বাংলাদেশ’ বা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সংবিধান যেখানে জাতীয়তার বিধান করেছেন বাঙালী সেখানে সেই সংবিধান যদি নাগরিকতার বিধানে ‘বাংলাদেশী’ রাখার বিধান করে তাহলে দেশের নাম বিকৃত করার দোষে সংবিধান দোষী হবে। কারণ আমরা ‘বাংলাদেশী’ নামক কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক নয় আমরা স্বাধীন ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ এর নাগরিক।
এখন বিশ্বের অন্য কোনো দেশের নাগরিক যদি আমার দেশ বাংলাদেশ বলে সে বলে ওহ! বাংলাদেশী
তাহলে সেটা তার ব্যপার এখানে তার এইভাবে ডাকার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে যেমন অবহেলার
প্রকাশ অথবা বলতে সহজ। আরও একটু পরিস্কারভাবে বললে যেমন, বাংলাদেশের কাউকে যদি আমি
তার বাড়ি জানতে চাই, সে যদি বলে আমার বাড়ি নোয়াখালি। আর আমি যদি বলি ওহ! নোয়াখাইল্যা।
সেটা কিন্তু আমার বিষয়। আমি তাকে অবহেলা করে কিংবা সহজে চেনার জন্য নোয়াখালি বাড়ি
বলে তাকে নোয়াখাইল্যা বানিয়ে দিলেই সে কিন্তু নোয়াখাইল্যা নামক কোনো স্থানের অধিবাসি
নয় । কারণ নোয়াখাইল্যা নামক কোনো জায়গা বাংলাদেশে কেন বিশ্বের কোথাও নেই।
তাই আমাদের পবিত্র সংবিধানকে কার্যকর করার দায়িত্ব সরকার সহ আমাদের সকলের এবং
সংবিধানের বিধানগুলো অবশ্যই বাস্তবনির্ভর, যুক্তিক, যুগোপযোগী, মৌলিক ও শ্বাশত হওয়া আবশ্যক।
এই বিষয়ে জাতিকে সোচ্চার এবং সরকারকে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করছি। -
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তী প্রসঙ্গ: শান্তি ও মুক্তির জন্য শুদ্ধ জাতীয়তাবাদ কেন দরকার ? সংবিধানের অপর মূলনীতি> সমাজতন্ত্র,> গণতন্ত্র এবং> ধর্মনিরপেক্ষতা।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তী প্রসঙ্গ: শান্তি ও মুক্তির জন্য শুদ্ধ জাতীয়তাবাদ কেন দরকার ? সংবিধানের অপর মূলনীতি> সমাজতন্ত্র,> গণতন্ত্র এবং> ধর্মনিরপেক্ষতা।
আবার অসমাপ্ত সমাজতন্ত্রী ভাবধারায় প্রভাবিত এবং ভ্রান্ত ইসলামি নীতি ও মূল্যবোধ
চর্চায় নিয়োজিত কিছু বিশ্লেষক মনে করেন ‘জাতীয়তাবাদ’ খারাপ বিষয়। তাদের বোঝা-বুঝি অনুসারে,
‘জাতীয়তাবাদ মানে মানবতাকে কাঁটা তারের বেড়ায় আবদ্ধ করে ফেলা, জাতীয়তাবাদ মানে মানুষে
মানুষে বেধাবেদ সৃ্ষ্টি, জাতীয়তাবাদ মানে স্বজাতির প্রতি পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি,
নিজের জাতি অন্যায় করলেও তা না দেখার ভান করা হল জাতীয়তাবাদ, জাতীয়তাবাদ মানে সত্যকে
অস্বীকার করে জাতীয়তার সম্পর্কের জন্য মিথ্যাকে প্রাধান্য দান। ‘
এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা
হবে দ্বিতীয় পর্বে। প্রথম পর্ব এখানেই শষ করলাম।
No comments:
Post a Comment