বংশের নামঃ-
জহির মাহমুদের গোষ্ঠী, লামা-বায়েক, বায়েক
তথ্য প্রদানকারি: রবিউল আওয়াল, পিতা- জমাদ্দার মিয়া।
বংশ পরিচিতিঃ
লালপুর ইউনিয়নের ঐতিহৃবাহী এবং সবচেয়ে প্রাচীন বংশগুলোর মধ্যে
অন্যতম একটি বংশ হল জহির মাহমুদের গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী বা বংশের লোকজন লালপুর ইউনিয়নের
দুইটি গ্রাম লামা-বায়েক ও বায়েক গ্রামে বসবাস করছে। এই বংশের আদি পুরুষ শেখ আর মাহমুদ।
ধারনা করা হয় তিনি আজ থেকে প্রায় পাঁচশত (৫০০) বছর পূর্বে অত্র অঞ্চলে বসতি স্থাপন
করেন। জহির মাহমুদের বংশের বর্তমান মোরব্বী এবং বংশের মান্যগণ্য ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব
রবিউল আওয়াল। রবিউল আওয়ালের বর্তমান বয়স প্রায় একশত (১০০) বছর। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা
যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, সহযোগিতা, দিক নির্দেশনা, বর্ষর সময় ও নদী পথে পারাপার
এবং সমন্বয়ের ক্ষেত্রে দৃঢ় এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। অত্র এলাকার মুক্তিযোদ্ধাসহ
সর্বস্তরের মানুষ উনাকে একজন অলিখিত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে
একবাক্যে স্বীকার করে। রবিউল আওয়ালের কাছ থেকে জহির মাহমুদের গোষ্ঠীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ
তথ্য পাওয়া যায়। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অবগতির জন্য উক্ত বংশের কিছু তথ্য সংক্ষিপ্ত
আকারে তুলে ধরা হলঃ (১) রবিউল আওয়াল। রবিউল আওয়ালের পিতার নাম (২) জমাদ্দার মিয়া। জমাদ্দার
মিয়ার পিতার নাম (৩) নিজাম উদ্দিন সরকার। নিজাম উদ্দিন সরকারের পিতার নাম (৪) জহির
মাহমুদ। জহির মাহমুদের পিতার নাম (৫) আশিক ব্যাপারী। আশিক ব্যাপারীর পিতার নাম (৬)
সেক্কাল ব্যাপারী। সেক্কাল ব্যাপারীর পিতার নাম (৭) শেখ আর মাহমুদ।
আদি পুরুষঃ
শেখ আর মাহমুদই হল এই বংশের আদি পুরুষ। তিনি ভারতের কলকাতা থেকে
এসে অত্র এলাকায় প্রথম বসতি স্থাপন করেছিলেন বলে জানা যায়। অত্র এলাকায় শেখ আর মাহমুদ
যখন বসতি স্থাপন করেন তখনও লালপুরে তেমন লোকবসতি গড়ে ওঠেনি।
২য় প্রজন্মঃ
শেখ আর মাহমুদের ২ ছেলে ছিল। তারা হল (১) সেক্কাল ব্যাপারী এবং
(২) সলিম উদ্দিন। (সলিম উদ্দিনের কোনো ছেলে ছিল না তবে তার এক মেয়ে ছিল। শেখ আর মাহমুদ
নাতিনকে বিয়ে দিয়ে অত্র এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এই সলিম উদ্দিনের মেয়ের সূত্র
ধরে গড়ে ওঠা বংশধরেরা বর্তমানে লামা-বায়েক ও শরীফপুর গ্রামের ডিংগুর গোষ্ঠী হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত এবং সুপরিচিত।
৩য় প্রজন্মঃ
সেক্কাল ব্যাপারীর ছিল ৩ ছেলে। তারা হল (১) আশেক ব্যাপারী (২)
বধু ব্যাপারী এবং (৩) বদল ব্যাপারী। এই তিনজনের মধ্যে অন্যতম ছিল আশেক ব্যাপারী। আশেক
ব্যাপারী অগাধ সম্পত্তির মালিক ছিলেন। লালপুর ইউনিয়নে বর্তমানে আশেক ব্যাপারীর বংশধরদেরই
বসবাস। সেক্কাল ব্যাপারী অন্য দুই ছেলে বধু ব্যাপারী ও বদল ব্যাপারী এই এলাকে দূরে
কোথাও গিয়ে বসতি স্থাপন করেছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।
৪র্থ প্রজন্মঃ
আশেক ব্যাপারীর ছেলে ছিল ৩জন। তারা হল (১) ফকির মাহমুদ (২) জহির
মাহমুদ এবং (৩) রেয়াজ উদ্দিন। আশেক ব্যাপারীর ছেলে হিসেবে উনার ছিলেন অনেক জমি-জমা
ও সম্পদের উত্তরাধিকারী।
৫ম প্রজন্মঃ
ফকির মাহমুদঃ ফকির মাহমুদের ছেলে ছিল ২জন। তরা হল (১) আফতাব
উদ্দিন এবং (২) আমির উদ্দিন।
জহির মাহমুদঃ
আশিক ব্যাপারীর ছেলেদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জহির মাহমুদ। জ্ঞান-বুদ্ধি
ও সমাজ সেবামূলক কাজে জহির মাহমুদ ছিলেন অন্যতম। তিনি এলাকার বিভিন্ন আচার-বিচার বিচক্ষণতার
সম্পন্ন করে অত্র এলাকায় সুখ্যাতি অর্জন করেন এবং বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজের মাধ্যমে
সকলের কাছেই শ্রদ্ধাভাজন, গ্রহণযোগ্য এবং সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে এই বংশের বর্তমান
নামকরণটির ক্ষেত্রেও জহির মাহমুদের নামটি সকলের মুখে মুকে প্রচারিত হয়ে ওঠে। বর্তমানে
জহির মাহমুদের নামেই বংশটি প্রতিষ্ঠিত। জহির মাহমুদের ছেলে ছিল ৩জন। তারা হলে (১) মোজাফ্ফর
মুন্সি (২) নিজাম উদ্দিন সরকার এবং (৩) ওয়াজ উদ্দিন।
রেয়াজ উদ্দিনঃ
রেয়াজ উদ্দিন আশিক ব্যাপারীর ৩য় ছেলে। উনার সম্পর্কে বিশেষ কিছু
জানা যায়নি। ধারনা করা হয় উনি লালপুর থেকে ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে বসতি স্থাপন করেছিলেন।
৬ষ্ঠ প্রজন্মঃ
৬ষ্ঠ প্রজন্মের আফতাব উদ্দিন এবং আমির উদ্দিনের আওলাদদের সম্পর্কে
বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে জহির মাহমুদের বড় ছেলে হল মোজাফ্ফর মুন্সিঃ মোজাফ্ফর মুন্সির
ছিল ২ছেলে। তারা হল (১) নিয়ারুদ্দিন মুন্সি এবং (২) টুহু মুন্সি।
নিজাম উদ্দিন সরকারঃ
নিজাম উদ্দিন সরকার ছিল জহির মাহমুদের ছেলেদের মধ্যে অন্যতম।
পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সুনাম, সম্পত্তি তিনি দক্ষতার সাথে পরিচালনা করে
বংশের সুনাম বৃদ্দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। নিজাম উদ্দিন সরকারের ছিল ৩ছেলে। তারা
হল (১) আব্দুল মজিদ মিয়া (২) জমাদ্দার মিয়া এবং (৩) কালা মিয়া।
ওয়াজ উদ্দিনঃ
জহির মাহমুদের ৩য় ছেলে ওয়াজ উদ্দিন। ওয়াজ উদ্দিনের কোনো ছেলে
ছিল না। উনার ছিল দুই মেয়ে। তারা হল (১) ওজিরের মা এবং (২) নাজিরের মা নামেই তারা বংশের
সকলের কাছে পরিচিতি ছিল এবং তাদের বিয়ে অত্র এলাকায়ই হয়েছিল।
৭ম প্রজন্মঃ
জহির মাহমুদের ৭ম প্রজন্মের নিজাম উদ্দিন সরকারের বড় ছেলে আব্দুল
মজিদ মিয়া সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় উনার ছিল ৫ছেলে। তারা হল (১) আব্দুল করিম (২) আব্দু
রহিম (৩) আব্দুল আজিদ (৪) আব্দুল কারিদ এবং (৫) সাদির মাষ্টার।
জমাদ্দার মিয়াঃ
নিজাম উদ্দিন সরকারের ২য় ছেলে জমাদ্দার মিয়ার ছিল ১ ছেলে। উনার
নাম রবিউল আওয়াল। রবিউল আওয়াল মিয়ার বর্তমান বয়স প্রায়ে একশত (১০০) বছর। বর্তমানে উনিই
এই বংশের প্রধান এবং মোরব্বী। কালা মিয়াঃ নিজাম উদ্দিন সরকারের ছোট ছেলে কালা মিয়ার
৩ছেলে। তারা হল (১) মৃত বসু মিয়া সাবেক মেম্বার (২) মলাই মিয়া এবং (৩) কসু মিয়া।
৮ম ও ৯ম প্রজন্মঃ
বর্তমানে লালপুরের লামা-বায়েক ও বায়েক গ্রামে জহির মাহমুদের
বংশের ৮ম ও ৯ম প্রজন্মের লোকজনের বসবাস চলছে। এই বংশের বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় আটারশ
(১৮০০জন)
No comments:
Post a Comment